
একটা সময় একসঙ্গে একাধিক নায়ক নতুন সিনেমা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে হাজির হতেন। কাজ দিয়ে চলত একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মিষ্টি লড়াই। দর্শকরাও প্রায় প্রতিটি সিনেমা উত্সাহ নিয়ে দেখতেন। নির্মাতা-প্রযোজকরা চোখ বন্ধ করে তাদের নিয়ে বাজি ধরতেন। কিন্তু সময়ের আবর্তে সেই দৃশ্য এখন অনেকটা রূপকথার মতো হয়ে গেছে। ভালো সিনেমার অভাবে প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে সিনেমাহল। হাতেগোনা যে ক’টি হল এখনো জীবিত আছে—সেখানেও দর্শক চোখে পড়ার মতো। যদিও নতুন প্রজন্মের অনেক নায়কই চলচ্চিত্রের হাল ধরার চেষ্টা করছেন। তবে কতটা তারা কতটা সফল বা ধারাবাহিক তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিগত কয়েক বছর ধরে সুপারস্টার শাকিব খান ছাড়া দু-একজন হিরোর সিনেমা সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে। সেটাও আবার ঈদ উৎসবে। বাকি সময়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর বেশিরভাগই ব্যর্থ সিনেমার তকমা নিজের করে নিয়েছে। অনেকে এমন অবস্থার জন্য মানসম্পন্ন সিনেমার অভাবকে দায়ী করছেন। আবার অনেক তারকা সিনেমা হল কমে যাওয়া এবং কোনো প্রচারণা ছাড়াই চলচ্চিত্র মুক্তিকে দায়ী করছেন। তবে ব্যর্থতার কারণ যা-ই হোক, এ প্রজন্মের নায়করা যে নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না এটা বলার অবকাশ রাখে না।
চলচ্চিত্র যাত্রার পর থেকে নিয়মিতই সিনেপর্দায় দেখা দিতেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। অর্জনের ঝুলিতেও জমা করেছেন বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এমনকি ঢালিউড সুলতান খেতাব নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে হঠাৎ করেই সিনেমা থেকে দূরে সরে গেছেন এই নায়ক। গত বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পায় তার ‘শত্রু’ সিনেমাটি। এরপর আর নতুন কোনো সিনেমা মুক্তির খবরে পাওয়া যায়নি তাকে। যদিও মায়ের অসুস্থতার কারণে এই বিরতি ছিল বলে জানান বাপ্পী।
এদিকে ক্যারিয়ারে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেই আলোচনায় চলে আসেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। নিজের লুক-অভিনয় দিয়ে নজর কাড়েন নির্মাতা-প্রযোজক থেকে শুরু করে ভক্তদের। গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর চরিত্র রূপায়ণ করে প্রশংসিত হন সর্বমহলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও তার পরিচিতি বেড়ে যায়। তারপর প্রায় দু-বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন সিনেমা নিয়ে পর্দায় আসেননি শুভ। যদিও একাধিক সিনেমা মুক্তির মিছিলে রয়েছে তার।
এছাড়া চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। বর্তমানে তার হাতেও বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ রয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায়ও রয়েছে একাধিক সিনেমা। কিন্তু সিনেমা মুক্তির ধারাবাহিকতা এই নায়কও ধরে রাখতে পেরেছেন তা বলা যাবে না। অনেকটা বিরতির পর চলতি বছর মুক্তি পায় ‘শেষ বাজি’। কিন্তু সিনেমাটি ফ্লপের খাতায় নাম লেখায়। যদিও তড়িঘড়ি করে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন এই অভিনেতা। শুধু বাপ্পী, শুভ, সাইমন নন, দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন চিত্রনায়ক নিরব হোসেন ও ইমন। কিন্তু এখন অবধি উল্লেখযোগ্য কোনো সিনেমা ক্যারিয়ারের ঝুলিতে জমা করতে পারেননি তারা। এমনকি নিয়মিত নতুন সিনেমায় যুক্ত হওয়ার খবরে এলেও মুক্তিতে ধারাবাহিক তা বলা যায় না। তবে বর্তমানে তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং শোরুম উদ্বোধনের সাথে রয়েছেন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন একাধিক সিনেমার খবরে থাকতেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান।
তবে পদ হারানোর পর থেকে সেই খবরও পর্দার আড়ালে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডিগবাজি দিয়েই নায়ক তকমা ধরে রাখছেন এই অভিনেতা। অনেকেই অভিযোগ করেন, দেশের চলচ্চিত্র নায়ক সংকটে ভুগছে। কিন্তু ‘নায়ক’ তালিকায় চোখ রাখলে এই সংখ্যাকে নেহায়েত কম মনে হবে না। কিন্তু কাজ নিয়ে নিয়মিত পর্দায় হাজির এবং একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা ধারাবাহিকতা রক্ষা কতটা করতে পারছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও এ সকল নায়ক এরইমধ্যে চলচ্চিত্রে এক-দেড় দশক পার করে দিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে তারা ধুঁকে ধুঁকে চলা চলচ্চিত্রের হাল ধরবেন, ভালো ভালো সিনেমা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মুক্তির মিছিলে থাকবেন—এমন প্রত্যাশা তাদের ভক্তরা করতেই পারেন।