
ইসরায়েল ও হামাসের হাতে চূড়ান্ত খসড়া চুক্তি তুলে দেয়া হয়েছে। গাজায় শান্তিচুক্তি হতে চলেছে, বললেন জো বাইডেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আবার আলোচনায় বসবেন মধ্যস্থতাকারীরা। তাদের দাবি, কাতারের দোহায় সোমবার মধ্যরাতের আলোচনা সফল হয়েছে। সেই আলোচনায় জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেরই প্রতিনিধি ছিলেন।
বাইডেন যা বলেছেন: সোমবার তার পররাষ্ট্র নীতির সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘চুক্তির ফলে বন্দিরা মুক্তি পাবেন। যুদ্ধ থামবে, ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং ফিলিস্তিনে মানবিক সাহায্যের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে।’ বাইডেন বলেছেন, ‘হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তার ফলে যারা ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা মানবিক সাহায্য পাবেন।’ বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার মুখে রয়েছে।’
ইসরাইল ও হামাসের বক্তব্য: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানিয়েছেন, বল এখন হামাসের কোর্টে। হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা চুক্তির পক্ষে। বেশ কিছু মূল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই আলোচনা থেকে চূড়ান্ত ফল পাওয়া যেতে পারে।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিডিয়ন সার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। এটা আগের আলোচনার ক্ষেত্রে হয়নি। আমার মনে হয়, বন্ধু অ্যামেরিকা এই চুক্তির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করছে। বন্দিরা যাতে মুক্তি পায়, তারা তার চেষ্টা করছে।’
চুক্তিতে কী থাকতে পারে?
ইসরাইলের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘প্রস্তাবিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে হামাস ৩৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে। তার মধ্যে শিশু, নারী, অসুস্থ ও বয়স্করা থাকবেন। কিছু নারী সেনাকে হামাস বন্দি করেছে। তাদেরও প্রথম পর্যায়ে ছাড়ার কথা থাকবে। যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। সেখানে বাকি বন্দিদের ছেড়ে দেয়া নিয়ে কথা হবে। যে সব ইসরাইলি মারা গেছেন, তাদের দেহ ফেরত দেয়া নিয়েও কথা হবে।’
ইসরাইলের দাবি, হামাসের কাছে এখনো ৯৮ জন ইসরাইলি বন্দি আছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘ইসরাইলের সেনা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। তবে সীমান্তের মধ্যে ইসরাইলের সেনা থাকবে। তারা ইসরাইলের শহর ও গ্রামগুলিকে রক্ষার কাজের জন্য থাকবে। গাজার দক্ষিণপ্রান্তেও ইসরাইলের সেনা থাকবে। ফিলাডেলফি করিডোরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। চুক্তি হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।’
তিনি জানান, ‘নিরস্ত্র মানুষদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেয়া হবে। তবে কোনোরকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেতে দেয়া হবে না। যে সব ফিলিস্তিনি হত্যা ও ভয়ংকর আক্রমণ করার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত তাদেরও ছেড়ে দেয়া হবে। তবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আক্রমণের সঙ্গে যুক্তদের ছাড়া হবে না।’
দীর্ঘ আলোচনা: ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। বেশ কিছুদিন হলো, দুই পক্ষই বন্দিবিনিময় নিয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু হামাসের দাবি, স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের সেনাকে গাজা থেকে চলে যেতে হবে। আর ইসরাইল দাবি করেছে, হামাসকে ভেঙে দিতে হবে। তা না করা হলে তারা যুদ্ধ থামাবে না।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া: আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেবেন। এটাকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির চরমসীমা হিসাবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে যদি হামাস বন্দিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে তাদের ভয়ংকর মূল্য দিতে হবে।
এছাড়াও অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানিয়েছেন, আলোচনাকারীরা এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, ট্রাম্প এই চুক্তি মেনে নেবেন। তাই মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকর আলোচনায় ছিলেন। বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্কও ছিলেন।