রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে ‘পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি’ ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তার মা–বাবার নামে ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৩ সালের আগপর্যন্ত এ নামেই পরিচিত ছিল বিদ্যালয়টি। ২০১৩ সালে জাতীকরণের সময় সরকার ‘হাছিনা’ বানানটি বদলে ‘পাঁচবাড়িয়া হাসিনা ওয়াজেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্টের পর আবারও বিদ্যালয়টির নাম পাল্টিয়ে ‘পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ করা হয়েছে। বারবার নাম পরিবর্তনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮০৮টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় ৬০৩ নম্বরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাংশা উপজেলায় একসময় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন উপজেলার পাটগ্রামের বাসিন্দা (বর্তমান কালুখালী উপজেলা) মুনিবর রহমান। ১৯৮৮ সালে কসবামাজাইল ইউনিয়নে তার মা হাছিনা বেগম এবং বাবা ওয়াজেদ আলীর নামে ‘পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা হয়।
বিদ্যালয়টির জন্য স্থানীয় ৪টি পরিবার ৩৩ শতক জমি দান করে। জমিদাতা হিসেবে ওই পরিবারগুলো থেকে চারজন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাদের মধ্যে তিনজন অবসরে গেছেন। অপর একজন সদস্য আলফাজ উদ্দিন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন। আট মাস পর তিনিও অবসরে যাবেন।
আলফাজ উদ্দিন বলেন, ১৯৮৮ সালে পাংশা উপজেলায় কর্মরত এক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মা-বাবার নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে সারা দেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে গেজেট প্রাকাশ করেন। গেজেট বই হাতে পাওয়ার পর দেখতে পাই, আমাদের পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে পাঁচবাড়িয়া হাসিনা ওয়াজেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখা। গত ৫ আগস্টের পর আবারও বিদ্যালয়টির নাম পাল্টে ‘পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ করা হয়েছে। অনেকের ধারণা, শেখ পরিবারের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমারা নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শৈলন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এলাকাবাসী তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মুনিবর রহমানের কাছে বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে গেলে তার মা হাছিনা এবং বাবা ওয়াজেদের নামে নামকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমরা একমত হয়ে তখন কাজ শুরু করি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বানান পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করায় বিড়ম্বনায় পড়ি। ৫ আগস্টের পর নাম নিয়ে আবার জটিলতা দেখা দিলে শুধু পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। এভাবে নাম পরিবর্তনে এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। পূর্বের হাছিনা ওয়াজেদ নামটি ফিরে এলে আমাদের আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মুনিবর রহমান গত সপ্তাহে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিব বরাবর একটি আবেদন করেছেন। আবেদনের একটি অনুলিপি তিনি পেয়েছেন। সেখানে মুনিবর রহমান উল্লেখ করেছেন, হাছিনা ওয়াজেদ তার মা ও বাবার নাম। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা বা তার স্বামী ওয়াজেদের নাম নয়। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা অধিদপ্তর নতুন কোনো নির্দেশনা দিলে তা বন্তবায়ন করা হবে।