বছরের প্রথম দিন প্রথম-তৃতীয় শ্রেণির বই, বাকিগুলো ধাপে ধাপে

বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
স্কুলগুলোতে পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণেই এই তিন শ্রেণির ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা অন্যদের চেয়ে বাড়বে।
প্রাথমিকের অন্য শ্রেণির মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবেন আরও কয়েকদিন পর। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে কিছু বিষয়ের বই পাবেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
তবে এবার বছরের প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি।
বই ছাপানোর দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বলেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপানোর কাজের ৯৮টির মধ্যে ২৭টি দরপত্রের লটের বই পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে। বাকিরা প্রথম দিনই পেয়ে যাবে।
“চতুর্থ, পঞ্চম ও প্রাক-প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও কিছুটা দেরি হবে। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব বই পাঠানোর চেষ্টা করছি।”
এনসিটিবির কর্তা ব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ২০ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছে দেবে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “১ জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে।”
মুদ্রণের দায়িত্ব পাওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘লেটার এন কালার’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম দিন প্রাথমিকের ৭৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ বই শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে দেরি হবে
এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “আমরা ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি, সেভাবেই কাজ চলছে। আর এ শ্রেণিগুলোর অন্যান্য সব বই চলে যাবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে।”
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, “আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ করেছি। এখন সপ্তম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের কাজ করছি। সপ্তম শ্রেণির বইগুলোর কাজ শেষ হলে আমরা চতুর্থ শ্রেণির বইয়ের কাজ শুরু করব।”
লেটার এন কালারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “প্রাথমিকের বইগুলো ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। মাধ্যমিকের তিনটি বই আগে ছাপতে বলা হয়েছে, সেগুলোর কাজ করছি।”
প্রথম সপ্তাহে দশমের বই হাতে পৌঁছানোর আশা
নতুন শিক্ষাক্রমে চলতি বছরের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভাগ-বিভাজন ছিল না। তবে পুরনো শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বিভাজন নিয়ে তারা নতুন বছরে দশম শ্রেণিতে পড়বে। সেভাবেই ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে তাদের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, যার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
এক শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি আর আরেক শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণিতে পড়তে হওয়ায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইগুলো ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ছাপা শুরু হয়েছিলে’ বলে জানিয়েছিলেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি দশম শ্রেণির বইগুলো ৫ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব।”
বছরের শুরুতে বই পাবে না মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী
অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, “ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কিছু বই আমরা জানুয়ারির প্রথমাংশে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। এসব শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।”
পরিমার্জনের পর ছাপানো শুরুতে দেরি হওয়া, কাগজ সংকট ও তদারক প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনে দেরি হওয়ায় মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ পিছিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির বিতরণ উপ-নিয়ন্ত্রক মাহমুদা খানম বলেন, “আমরা দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে কাজ করছি। দিনরাত চলছে ছাপার কাজ। কাগজ অনুমোদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশকদের জানাচ্ছি।
“আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর, যা প্রতিবছর হয় জুনে। তাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।”
মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, “মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির তিনটি বই ছাপানোর কাজ চললেও তা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে না। এজন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে।
“সবগুলো প্রেস এক সঙ্গে ছাপার কাজ শুরু করেছে। তাই কাগজের সংকট আছে। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ শেষ করতে প্রেসগুলো হিমশিম খাচ্ছে।”