ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ২১, মানবিক বিপর্যয় চরমে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় নিহত আরও ২১ ফিলিস্তিনি। এছাড়াও ইয়েমেন, লেবাননে ইসরাইলি বাহিনী একাধিক ভয়ংকর বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং অসংখ্য আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে, গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি সংকটের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যা মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল সানা শহরের কাছে একটি পাওয়ার স্টেশন এবং হোদাইদা ও রাস ইসা বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। একই দিনে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেও বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং হুথিদের হামলা প্রতিরোধের জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক হামলায় ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং পাওয়ার স্টেশনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণে হামলায় বেশ কিছু লোক নিহত হলেও ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এদিকে, গাজায় শুক্রবার সকাল থেকেই ইসরায়েলের হামলায় ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।

গাজায় চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থা আরও সংকটপূর্ণ। ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’বা এমএসএফ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ জেনারেটরের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৬,০০৬ জন নিহত এবং ১,০৯,৩৭৮ জন আহত হয়েছেন।নিরলস এই হামলায় আরও লক্ষাধিক লোক আহত হয়েছেন। একই সময়ে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি বন্দি হয়েছেন।এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন।গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েল, ইয়েমেন এবং গাজায় চলমান এই সংঘাত মানবিক সংকটকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ এবং সহমর্মিতার প্রয়োজনীয়তা এখন সবচেয়ে জরুরি।