নিউইয়র্কে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যে ফের বিতর্কে কাজল হিন্দুস্তানি

 

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মী কাজল হিন্দুস্তানি। মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ‘আব্দুল’, ‘জম্বি’ এবং ‘হিন্দুদের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে তিনি হিন্দু পুরাণের দানবের সঙ্গে তুলনাও করেন।

বুধবার (২৩ জুলাই) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর আয়োজনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কাজল শিংগালা (প্রচলিত নাম কাজল হিন্দুস্তানি) বলেন, “এই জম্বির (মুসলিম) সঙ্গে লড়তে হলে হিন্দুদের একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে—তাহলে হিন্দুরা কোথায় যাবে?” ভারতের হিন্দুদের উদ্দেশে তিনি ‘চত্রপতি শিবাজীর আদর্শে একটি হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার’ আহ্বান জানান।

কাজলের বক্তব্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও তোলা হয়। তিনি দাবি করেন, মুসলিমরা হিন্দুদের তৈরি সম্পদ দখল করছে এবং বহুসন্তান জন্ম দিয়ে ‘সৈন্য তৈরি’ করছে। এমনকি বলিউড অভিনেতা সালমান খান ও সাইফ আলি খানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, তারা হিন্দু নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরে উদ্বুদ্ধ করছেন।

এই বক্তব্যকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেয়ার (CAIR) নর্থ ক্যারোলিনা, ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল, দ্য শিখ কোয়ালিশন এবং মুসলিমস ফর সোশ্যাল জাস্টিসসহ একাধিক সংগঠন কাজল হিন্দুস্তানির যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিলের দাবি জানায়।

বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাজল বলেন, “এটা সবার আমেরিকা। ‘মুল্লো’ কি বাপের আমেরিকা না?”—যেখানে ‘মুল্লো’ শব্দটি মুসলিমদের প্রতি অবমাননাকর ইঙ্গিতে ব্যবহার করা হয়।

কাজল হিন্দুস্তানিকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ২০২৩ সালে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী বক্তৃতা দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে কাজল ছিলেন শীর্ষ মুসলিম ও খ্রিস্টানবিরোধী বক্তা—যার অন্তত ৯টি বক্তব্যে সরাসরি সহিংসতার ইঙ্গিত ছিল।

টুইটারে নিজেকে উদ্যোক্তা, গবেষক, বিতার্কিক ও ‘গর্বিত ভারতীয়’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই নেত্রী নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোতে। তার অনুসারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ, যার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাকাউন্টও রয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, নিউইয়র্কের অনুষ্ঠানস্থলে কাজলের ঘৃণামূলক বক্তব্যে উপস্থিত একাংশ দর্শক হাততালির মাধ্যমে সাড়া দেন, যা প্রবাসী ভারতীয় সমাজের মধ্যে একটি চিন্তাজনক বিভাজনের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

এদিকে, পূর্ব ঘোষিত একটি অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণের কথা থাকলেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস শেষ মুহূর্তে সেই আমন্ত্রণ বাতিল করেন।