গাজীপুরে এক বছরে ৭২টি কারখানা বন্ধ: বেকার ৭৩ হাজার শ্রমিক

 

বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে গত এক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ৭২টি গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা। এতে কর্মহীন হয়েছেন অন্তত ৭৩ হাজার ১০৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ব্যাংকের অসহযোগিতা, বৈদেশিক কার্যাদেশ কমে যাওয়া ও আর্থিক সংকট—এই তিন কারণেই মূলত একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

‘সিজন ড্রেসেস’ বন্ধের করুণ গল্প
টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘সিজন ড্রেসেস’ কারখানায় কাজ করতেন ১,২৬০ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, ব্যাংকের দ্বিগুণ হারে কিস্তি কেটে নেওয়া এবং কার্যাদেশ বাতিলের কারণে ২৮ বছরের প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় গত জুলাইয়ে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি বাহাউদ্দিন চৌধুরী বলেন,

“শ্রমিক অসন্তোষ হতো না, অর্ডার বাতিল হতো না—শুধু ব্যাংকের সহযোগিতা পেলেই সবকিছু রক্ষা করা যেত।”

কারখানা বন্ধের হার ও পরিণতি
কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী:

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে ৭২টি কারখানা

এর মধ্যে গত ৬ মাসেই বন্ধ হয়েছে ২৯টি কারখানা

ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ হয় বেক্সিমকো গ্রুপের ১৩টি কারখানা, বেকার হয় ২৮,৫১৩ জন শ্রমিক

শ্রমিকদের গল্প: চাকরি থেকে ইজি বাইক ও ঝিয়ের কাজ
বেকার হয়ে গেছেন অসংখ্য শ্রমিক, যাদের কেউ পেশা বদল করে অটো চালাচ্ছেন, কেউ বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ খুঁজছেন

অনেকে কাজ না পেয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন

শ্রমিক হারিয়ে ফাঁকা পড়ে আছে হাজার হাজার ভাড়াবাড়ি, জমে উঠছে না হাটবাজারও

বিশ্লেষণ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোটের মো. আশরাফুজ্জামান বলেন,

“প্রায় সব কারখানায় কার্যাদেশ কমে গেছে, নতুন নিয়োগ নেই বললেই চলে। প্রতিদিন নতুন করে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে।”

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার বলেন,

“মূলত আর্থিক সংকট, মালিকানা পরিবর্তন, ব্যাংক ঋণ পুনঃতালিকাভুক্ত না হওয়া—এসব কারণেই বন্ধ হচ্ছে কারখানাগুলো।”