
আগামী ৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঘোষণা করা হচ্ছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। তবে এই ঘোষণার আগেই বিতর্কে ঘিরে ধরেছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন—এই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর আদৌ কতটা জরুরি?
স্বাক্ষরের চ্যালেঞ্জে কমিশন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সনদ তৈরি করে তা দলগুলোর স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে। তবে কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“জুলাই সনদে স্বাক্ষর করানো এখন এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। মতভেদের কারণে স্বাক্ষরের গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”
স্বাক্ষরের যৌক্তিকতা নিয়ে মতবিভেদ
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব দল আলোচনায় অংশ নেয়নি বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তাদের অনুপস্থিতিতে একটি জাতীয় সনদের গ্রহণযোগ্যতা সীমিত। কারো মতে, এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত হলে বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন,
“এই দেশে জাতীয় ঐকমত্য মানে দাঁড়িপাল্লায় সোনাব্যাঙ মাপার মতো। সনদ রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা না করে দলভিত্তিক গোঁজামিল দিয়ে বাস্তবায়নের আশা করা বাতুলতা।”
তিনি আরও যুক্ত করেন,
“যদি সরকারের পক্ষ থেকে অর্ডিন্যান্স বা প্রেসিডেনশিয়াল আদেশের মাধ্যমে সনদ ঘোষণা হতো, তখন সেটা দলীয় নয়, রাষ্ট্রীয় হতো।”
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণেও প্রশ্ন
ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোহাম্মদ ইমরান আহম্মেদ প্রশ্ন তোলেন—
“যারা সনদে স্বাক্ষর করছেন, তাদের আইনি বা সাংবিধানিক ক্ষমতা কী? তারা কি নির্বাচিত প্রতিনিধি? আগামী নির্বাচনে তাদের বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা কোথায়?”
তিনি আরও বলেন,
“রাষ্ট্র বা সরকার ইনভলভ না হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে সনদ দিলে সেটি তো দলীয় ব্যাপার হয়ে যায়। জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় ঘোষণাই হওয়া উচিত।”
কমিশনের ব্যাখ্যা
কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলছেন,
“স্বাক্ষরের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসিয়াল সম্মতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। সনদে কারা একমত, কারা নয়—সব কিছু উল্লেখ থাকবে।”
তিনি জানান, শুধু আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোকেই চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হবে।
বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. রাশেদ আলম ভূইয়া বলেন,
“স্বাক্ষরের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, তবে জনগণের দৃষ্টিতে স্বচ্ছতা আসে—কারা একমত, কারা নয়। আর স্বাক্ষর না করলে ভবিষ্যৎ সংসদে এর বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।”