
‘আত্মগোপনে থাকা’ সাবেক ডেপুটি স্পিকার, প্রতিমন্ত্রী ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলেও বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
তবে শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক এবং তানভীর হাসান সৈকতকে ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতারের’ কথা বলা হলেও পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পরপরই সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করার কথা জানা যায়।
সেদিনই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।
পরে তাদের দু’জনকেই সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানতে পারে বিবিসি বাংলা।
এছাড়াও বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের আটক হবার ভিডিও ছড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে।
তবে তাকেও সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সেক্ষেত্রে আগেই আটক হওয়া ব্যক্তিরা কীভাবে আত্মগোপনে গেল এবং কেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করতে হলো উঠছে সে প্রশ্নও।
এর আগে, বুধবার সন্ধ্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
গত ১৬ই জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একটি দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
‘পলকের নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ’
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মৌখিক নির্দেশে ইন্টারনেট দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল, এমন তথ্য জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নির্দেশে সাত সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে আসে।
একইসঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারকে (এনটিএমসি) দায়ী করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে পাঁচই অগাস্ট পর্যন্ত দফায় দফায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া কেবল সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মৌখিক নির্দেশেই তা বাস্তবায়ন করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও ১৭ জুলাই থেকে পাঁচই অগাস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এনটিএমসি এর নির্দেশনায়।
ফলে ওই সময়ে ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার সাথে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না। বরং এই দুটো বিষয়কে সম্পৃক্ত করে প্রচারণার মাধ্যমে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাতির সাথে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন।
এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলমান আছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।