
দেশে কোনো খাদ্য সংকট না থাকলেও চালের দাম বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী—চাহিদার তুলনায় দেশে চালের উৎপাদন অনেক বেশি, মজুদও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তারপরও বাজারে চালের অস্বাভাবিক দাম সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার টন। অনুমতি নেয়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬৮ শতাংশই চাল আনেননি। অথচ আমদানিকে উৎসাহিত করতে পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছিল শুল্ক, কর ও সম্পূরক শুল্ক।
মজুদের চেয়ে বেশি উৎপাদন
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখ টন, যেখানে চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন। প্রতিদিন গড়ে দেশে ১ লাখ টন চাল ব্যবহৃত হয়। এর পরও বাজারে মূল্যবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেই উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বারবার সময় বাড়ানো, তবু চাল আসেনি
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪ দফায় ২৭৭টি অনুমতিপত্রে ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। এরপর আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২ লাখ টন চাল আনতে অনুমতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি অনুমতিপত্রে মোট ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি মঞ্জুর করা হয়।
শর্ত ছিল, ১০ থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি ও বাজারজাত করতে হবে। এরপরও চার দফায় সময় বাড়ানো হয়—সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ১৫ এপ্রিল। কিন্তু এরপরও মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে, যা মোট অনুমতির ৩২ শতাংশ মাত্র।
সক্রিয় কি সিন্ডিকেট?
চাল আমদানিতে ভ্যাট ও কর প্রত্যাহার করেও ব্যবসায়ীরা আমদানি না করায় প্রশ্ন উঠেছে—তাদের উদ্দেশ্য কী? বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্য বাড়ানোই কি লক্ষ্য ছিল?
বিশ্লেষকদের ধারণা, কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ধান ও চাল কিনে গুদামজাত করে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এতে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে একটি গোষ্ঠী।
এ বিষয়ে একজন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা বলেন,
“চাল নিয়ে কোনো সংকট নেই। আড়ত, গুদাম ও মোকামে প্রচুর চাল মজুদ রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে দাম বাড়ছে, যা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে।”
বাজার মনিটরিংয়ের দাবি
সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন, বাজারে চালের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় বাজার তদারকি জরুরি। তা না হলে সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের দৌরাত্ম্য থামবে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে কড়া অবস্থান নিতে হবে এবং অনুমতি নিয়ে চাল না আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।